বৈরী আবহাওয়ায় মাছ বিক্রিতে ভাটা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  মাছচাষে গড়বো দেশ, বদলে দেব বাংলাদেশ  প্রতিপাদ্যে ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০১৭’ উপলক্ষে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে চলছে ‘মৎস্য মেলা’।

মৎস্য অধিদপ্তর আয়োজিত এ মেলা শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। মেলায় ছোট-বড় মোট ৩৭টি স্টল অংশ নিয়েছে। যার কয়েকটিতে তাজা মাছ বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে।

মেলার গেট দিয়ে সোজা ঢুকতেই চোখে পড়লো ছোটখাটো একটি জটলা। ভিড় ঠেলে সামনে এগুতেই দেখা গেল, মানুষ লাইন দিয়ে মাছ কিনছে। অ্যালুমিনিয়ামের গামলায় থরে থরে সাজানো রয়েছে হরেক রকম মাছ। দোকানের নাম হাবিব এন্টার প্রাইজ।

অনেকক্ষণ সেখানে মাছ ঘেঁটে দেখছিলেন মামুনুর রশীদ। তিনি এসেছেন মোহাম্মদপুর থেকে। কি মাছ কিনছেন জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ফলি মাছ কিনতে এসেছি। বাসার সবাই এই মাছ খুব পছন্দ করেন। বৈরী আবহাওয়াতে তাই মাছ কিনতে আসা। তবে দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে।

দাম বেশি রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে দোকান মালিক হাবিব সরকার বললেন, আমরা যে দামে কিনতে পেরেছি, তা থেকে সামান্য লাভ রেখেই বিক্রি করছি। বেশি দাম রাখা হচ্ছেনা। তাছাড়া আজ মেলার শেষ দিন, বেশি দাম রেখে আমাদের কি লাভ?

বিকিকিনি কেমন জানতে চাইলে তিনি হাওর বার্তাকে বলেন, আবহাওয়ার জন্য বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। তবে তারপরও যা হচ্ছে, খারাপ না। মোটামুটি।

হাবিব এন্টার প্রাইজে রুই, ফলি, কাতলা, চিংড়ি, পাবদা, পাঙ্গাস, ইলিশসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা ও ফলি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা দামে।

হাবিব এন্টার প্রাইজের বিপরীত পাশেই বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের স্টল। সেখানেও মানুষের ঢল। দেশি প্রজাতির মাছে ভরপুর এ স্টল। দোকানিরাও ব্যস্ত। কেউবা মাছে পানি কিংবা বরফ দিতে আবার কেউবা বেচাবিক্রিতে। আরেকজন ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছেন কেবল বিক্রির টাকা গুনতে। কথা হলো তাদের একজনের সঙ্গে। জানালেন, সেখানে প্রতি কেজি নদীর রুই (মাঝারি) ৪৫০ টাকা, রুই (ছোট) ৪০০ টাকা, কাতলা (বড়) ৪৪০ টাকা, দেশি কোরাল ৬৮০ টাকা, বাইলা ৭৫০ টাকা, বোয়াল ৬৮০ টাকা, ইলিশ ১১২০ টাকা এবং পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকা।

এই স্টলে মাছ কিনতে এসেছেন মণিপুরীপাড়ার জেবুন্নাহার। পেশায় তিনি একজন গৃহিনী। জানালেন, বাসায় মেহমান এসেছেন। সংবাদপত্র মারফৎ জেনেছেন এখানে জ্যান্ত মাছের মেলা বসেছে। তাই বিচিত্র রকমের মাছ কিনতে এসেছেন তিনি।

স্থানীয় বাজারের তুলনায় দাম বেশি রাখা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে এ গৃহিনী বলেন, খুব বেশি রাখছেন না। কারণ মাছগুলো যে সাইজ এবং মানের, তা এই দাম দিয়ে কেনা লাভজনক।

মেলার মেসার্স এবিএস ফিস স্টলেও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের মাছ। দোকানি জানালেন, অধিকাংশ মাছই হাওড় এবং নদীর। তাই দাম স্থানীয় বাজারের চেয়ে সামান্য একটু বেশি।

গলদা চিংড়ি, বাইলা, ইলিশ, রুই, কাতলা, পাবদাসহ বিভিন্ন প্রকার দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে স্টলটিতে। দামও নাগালের মধ্যে।

১০০০ টাকা কেজিতে আইল মাছ বিক্রি হচ্ছে কারওয়ান বাজার পাঁচতারা সমন্বয় মৎস্য আড়ৎদার বহুমুখী সমবায় সমিতির স্টলে। সেখানে মাছ কিনতে এসেছেন পশ্চিম রাজা বাজারের বেশ ক’জন ছাত্রী। তারা সবাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তাদের ভেতর থেকে সীমা জানালেন, বৃষ্টিমুখর আবহাওয়ায় ফ্ল্যাটের সবাই মিলে ঠিক করেছি বড় মাছ ভুনা করে খাবো। তাই মাছ কিনতে এলাম। কিন্তু এসে দেখি, দাম চড়া। জানিনা শেষ অবধি কিনতে পারব কিনা।

বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে দোকানি জানালেন, খুব বেশি ভালো নয়। আবহাওয়ার কারণে লোকজন কম আসছেন।

বিক্রির বাইরেও মেলা প্রাঙ্গণে চলছে বিভিন্ন প্রকার মাছের প্রদর্শনী। মূলত মাছের সঙ্গে মানুষের পরিচয় করিয়ে দিতেই এই উদ্যোগ।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের স্টলে ঢুঁ মেরে দেখা গেল সেখানে কুচিয়া, শিলা কাঁকড়া, ট্যাংরা, কৈ, গুলশা, পাবদা, মহাশোল, ভেদা, ফলি, বিএফআরআই রাজপুঁটি, শিং, মাগুর, পারশে, গলদা, বাগদা, চিত্রা, ভেটকি, বিএফআরআই গিফট তেলাপিয়া, বিএফআরআই লাল তেলাপিয়া ও বিভিন্ন প্রকার শুঁটকি প্রদর্শনী করা হচ্ছে।

স্টলে দর্শনার্থী কেমন আসছে জানতে চাইলে স্টলে থাকা স্বেচ্ছাসেবক জানালেন, বৃষ্টির মধ্যে খুব বেশি মানুষ আসছেনা। যে ক’জন আসছে, তাদের অধিকাংশই তরুণ। মধ্যবয়স্করাও আসছেন কমবেশি। তবে সেটা বিকেলের পর।

মৎস্য কাজে ব্যবহৃত হয় এমন সব পণ্যেরও পসরা বসেছে মেলায়। ফিসটেক হ্যাচারি লিমিটেডের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে মাছের অক্সিজেন গ্রহণের বিশেষ যন্ত্র। নাম অ্যারেটর। এটি পুকুরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন উৎপাদন ও পানির মধ্যে স্রোত তৈরি করে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মেশিনটির দাম ৪৩ হাজার টাকা। ভারতের তৈরি এই মেশিনটি পাওয়া যাবে ফিসটেক বিডি লিমিটেডে।

যোগাযোগের ঠিকানা: বাড়ি-০২, রোড-০৭, সেক্টর-০৫, উত্তরা, ঢাকা। মোবাইল: ০১৯২৬ ৯৯০৪৯৫

পাশের স্টল অ্যাডভান্সড ইকুইপমেন্ট লিমিটেডের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে মাছের আইশ পরিস্কার করার বিশেষ মেশিন। নাম ডিসকেলিং মেশিন। এটি ঘন্টায় ৬০ কেজি মাছের আইশ পরিস্কার করতে সক্ষম। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই যন্ত্রের দাম পড়বে ৮০ হাজার টাকা।

মেশিনটি কিনতে হলে যোগাযোগ করা যাবে অ্যাকুয়া কালচার সল্যুশন, মোবাইল: ০১৭৮৫ ৭৯৮০০৫ এই ঠিকানায়।

একই স্টলে রয়েছে মাছের খাবার সরবরাহের জন্য বিশেষ যন্ত্র। নাম, অটোমেটিক ফিশ ফিডার। এটি ব্যবহারের ফলে পুকুরের পাড়ে গিয়ে মাছের খাবার দেয়ার দরকার নেই। মাছের খাবার দেয়ার সময় ও পরিমাণ স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে বসে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। মেশিনটির দাম পড়বে ৫০ হাজার টাকা।

এর বাইরে মেলায় ওয়ার্ল্ড ফিশ, ব্র্যাক ফিশারিজ এন্টার প্রাইজ, বাংলাদেশ একুয়া প্রোডাক্ট কোম্পানিজ এসোসিয়েশন, সলিডারিড্যাড, রুপালী মৎস্য হ্যাচারি, ই ফিশারি, দি ইউরেকা মার্কেটিং কোং, হীরামুক্তা বহুমুখি মৎস্য প্রকল্প, অ্যাসাপ হেলদি ফুড লিমিটেড, বাংলাদেশ আমেরিকান এগ্রো কমপ্লেক্স, আফতাব বহুমুখি ফার্মস লিমিটেড, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প, জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প, স্বাদু পানির চিংড়ি সম্প্রসারণ প্রকল্প (২য় পর্যায়), ইকোফিস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মেরিন ফিসারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্প, বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্প, ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রেগ্রাম ফেজ টু প্রকল্প, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জ জেলায় মৎস্য ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট স্থাপন প্রকল্প, উন্মুক্ত জলাশয়ে বিল নার্সারি স্থাপন এবং পোনা অবমুক্তকরণ প্রকল্প, ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্প (৩য় পর্যায়) ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) স্টল রয়েছে।

মেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্তব্যরত কর্মকর্তা অরুণ বরণ সরকার হাওর বার্তাকে জানান, এবারের আয়োজন যথার্থ করতে কর্তৃপক্ষের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে দর্শনার্থী আশানুরুপ কম এসেছেন।

২০ জুলাই শুরু হওয়া এ মেলা শেষ হচ্ছে ২৪ জুলাই। সকাল ১০ টা থেকে মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর